বিনাদোষে মামলায় অন্তর্ভুক্তি, অব্যাহতি চেয়ে আওয়ামী লীগ নেতার সংবাদ সম্মেলন

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে তহশিলদারের উপর হামলার ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫ থেকে ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী পানির ঘাট এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনকালে খবর পেয়ে সেদিন দুপুরে হাজির হয় ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (৪৬)।

এসময় বালু তোলায় বাধা দিলে এ কর্মকর্তার উপর হামলা চালায় মনির মোল্লার ড্রেজার চালক অবৈধ বালু উত্তোলন কাজের সাথে জড়িতরা। মনির মোল্লার ড্রেজারে কাজ করা তাজুর প্রচন্ড মারধরের শিকার হন তিনি।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইয়াছিন ফারুক মজুমদারের বরাবর আসামী ও অজ্ঞাতদের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দায়ের করেন হামলার শিকার উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।

এজাহার সূত্র জানায়, ২০ জুন দুপুরে বালু তোলার কাজের স্থানে গেলে প্রথম বিবাধী বাদী আরিফকে হ্যামার দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করে। পরে সেটি প্রতিহত করলে পীঠে আঘাত পান তিনি। হামলায় আহত হওয়ার পাশাপাশি নিজের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে গিয়ে কাদায় ফেলে নষ্ট করে মোঃ করিম ও মোঃ মনির নামে এজাহারনামীয় ৫ ও ৬ নম্বর আসামী। তার আগে তিন ও চার নম্বর আসামী পকেটে থাকা দশ হাজার টাকা চুরি করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে ঘটনাস্থলে না থাকা নয় নম্বর আসামী শাহজালাল রাহুল তার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি মুছে দেয় বলে মামলায় উল্লেখ করেন আরিফ। ঘটনার মোড় এখান থেকেই শুরু। সত্যতা জানতে তহশিলদার মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে কল করা হলে তিনি নিজেই শিকার করেন শাহজালাল রাহুল ছিলো না ঘটনাস্থলে। প্রধান আসামী তাজু তার হাত থেকে মোবাইল নিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। অভিযোগ করে বলেন, হামলার পেছনের মুল মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির মোল্লা। তিনি ফোনে হামলার নেতৃত্ব দিলেই হামলা চালায় তাজুর সাথে থাকা লোকজন।

ঘটনার শেষ এখানেই নয়। হামলার নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লার কাছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঘটনার সাথে নেই তার হাত।

২৭ জুন (বৃহস্পতিবার) সকালে জেলা শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মামলার ৯ নম্বর আসামী শাহজালাল রাহুল বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ২০জুন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান নামে একজন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় তাজু নামের একজনকে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাতসহ বিশজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। নামসহ উল্লেখ করা আসামীদের আরো তিন থেকে চারজন এটির সাথে জড়িত নয় বলে আমি শুনেছি। তবে আমি সম্পুর্ন নির্দোষ। ভূমি কর্মকর্তা মহোদয় একটি কল রেকর্ডে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না- এই মর্মে স্বীকার করেছেন। তবে কিভাবে আমাকে মামলায় জড়ানো হলো সেটি তিনি উল্লেখ করেননি। কল রেকর্ডটির সূত্র মারফত আমি জানতে পারি, হামলায় নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির মোল্লা। তবে ঐ ভূমি কর্মকর্তা কেন হামলায় নেতৃত্বদানকারীর নাম উল্লেখ না করে আমাকে ফাঁসালেন সে বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। মনির মোল্লা একজন অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও সরকার দলীয় শক্তির অপব্যবহারকারী। অবৈধভাবে বালু তুলে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার মোহাম্মদপুরে রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক ফ্ল্যাট। তার নেক নজরে আমিসহ নির্দোষ দাবীদার কয়েকজন মানুষের নামে মামলা হয়েছে কিনা- সেটি খতিয়ে দেখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি করজোড়ে অনুরোধ জানাই। ২০১২ সাল থেকে চাঁদাবাজি, মার্ডার এবং ধর্ষণের মতো এমন ঘৃনিত মামলায়ও আমাকে জড়িত করা হয়েছিল, সবচেয়ে দুঃখের এবং কষ্টের বিষয় হলো মিথ্যা মামলার কারণে আমার সহজ সরল সরকারি চাকরিজীবি বাবা টা স্টক করে মারা যায়। আমার ছোট সরকারি চাকরিজীবি ভাইটাকে ধর্ষণের মতো ঘৃনীত মামলা থেকে রেহাই দেয়নি তারা। মতির হাটের একটা খুুুুনের মামলায়ও আমাকে জড়িত করা হয়েছিলো।

অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, মনির মোল্লা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় গড়ে তুলেছেন নদী থেকে অবৈধ উপায়ে বালু তোলার মহাসাম্রাজ্য। ড্রেজার বাণিজ্যে তিনি হয়ে উঠছেন চরাঞ্চলের রাঘববোয়াল। মনির মোল্লার ভাই দিদার মোল্লার ড্রেজারে কাজ করা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসন ম্যানেজ করেই আমরা চলি। তার জন্য আমাদের নামে মামলা হয়না।

আপনার মতামত লিখুন :