রায়পুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব, প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না বালু দস্যদের


°জেলার রামগতি-কলমনগরে ভাঙন চলমান।
°ভাঙনের উচ্চ ঝুঁকিতে রায়পুর।
° বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি।
°অন্তত ১০ হাজার পরিবার বাস্তুহারা হওয়ার শঙ্কা।
° আতঙ্কে কাটছে মেঘনাপাড়ের মানুষের দিন।
°জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।
°ড্রেজার নিয়ে প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্বে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাণ হারিয়েছে এক কিশোর।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে মেঘনা নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ টি ড্রেজার দিয়ে নদীর চর ঘেঁসে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলমান রয়েছে।
এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে মেঘনা চরের ফসলি জমি পর্যন্ত কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে চরে ব্যাপকভাবে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি আসন্ন বর্ষা মৌসুমে তীরবর্তী গ্রামগুলো হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
জানা যায় গত কিছুদিন আগে জেলার রায়পুর উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকদিন টানা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন গুলো জব্দ’সহ মোটা অংকের জরিমানা করার পরে কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার চলানো শুরু হয়েছে সেগুলো।
প্রভাবশালীরা ড্রেজার লাগিয়ে চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিতে আছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট জমিতে বিভিন্ন ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়ায় কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়াও ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ফেলার কারণে চরে ব্যাপক ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীর মাঝে। সম্প্রতি দিদার মোল্লা ও দুলাল ছৈয়াল নামের দুই ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করে রায়পুর উপজেলা প্রশাসন।
অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হলেন, ৮নং দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার দিদার মোল্লা, মিয়ার হাটের হাসেম চৌকিদার, দুলাল সৈয়েল, জামাল,জুলহাস মোল্লা, ফারুক সয়েল, বাবুল বেপারী, মোতালেব চৈয়েল, মিন্টু মোল্লা, বাবুল মোল্লা ও হারুনুর রশিদ নয়ন।
কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে তাকে আটকিয়ে মারধর করা হয় এবং আমাদেরকে বাজারে উঠতে দেওয়া হয় না, আমাদের ফসলি জমি তারা কেটে নিয়ে যায়, নদীর পাড়ের ঘর বাড়ি সব ভেঙ্গে পড়তে আছে।
অবৈধ ড্রেজার চালানোর অপরাধে গতবছর ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার দিদার মোল্লাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন দাশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী থেকে বালু উত্তোলন ভাঙন এবং জনপদের নদী গর্ভে যাওয়ার বার্তা মাত্র। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষ সচেতন না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
স্থানীয় একজন ড্রেজার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে ড্রেজার বসাতে হলে দিদার মোল্লাকে টাকা দিয়ে বসাতে হয়, টাকা না দিলে বসাতে দেয় না, আমি এক লাখ টাকা দিয়ে বসিয়েছি।
মেঘনাপাড়ের রাহুল ঘাটেও ড্রেজারের রমরমা ব্যবসায় চলছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের জেরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে হত্যাকান্ড। কিশোর হত্যার ঘটনায় আলোচিত সেই রাহুল জেলে যেতেই শুরু হয় ভাগাভাগি নতুন রঙ্গখেল। তার ড্রেজার ব্যবসার অবস্থা নিয়েছে স্হানীয় প্রভাবশালী হাসেম চৌকিদার। এদিকে রাহুল জেলে থাকলেও তিনি জেল থেকে মাসুদ নামের এক লোককে নির্দেশনা দিয়ে তার এই অবৈধ ড্রেজার ও চলমান রাখছে।
ভেতরকার সূত্র বলছে, ড্রেজার ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক রুপ নিয়েছে সাপ-নেউলের ন্যায়। জড়িত চৌকিদার, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন প্রভাবশালীদের একটি অংশ। সে তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা দিদার মোল্লা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, আমরা নিয়মিত অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি, যখনেই খবর পাই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেই। আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন থেকে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। অভিযান চলমান রয়েছে। খোঁজ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।