মিয়ানমারের বৌদ্ধ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের দ্বারা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চরম নিপীড়ন নির্যাতন শুরু হলে তারা দেশ ত্যাগ করে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা চালায় ২০১৬-১৭ সালে।বিজিবি অস্ত্র তাক করে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করলে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম নাফ নদীতে ডুবে মারা যায়। মিয়ানমার হতে বিতাড়িত এই মজলুম জনগোষ্ঠীকে ধর্মীয় আবেগে আশ্রয় দেয়ার জন্য আমরা সাধারণ জনগণ সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম করতে থাকি।রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় না দেয়ার সমালোচনা করেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গুলো।
হেফাজত তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন রোহিঙ্গাদের পুরো দায়িত্ব তারাই নেবেন।পাবলিক সেন্টিমেন্টাল ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন আমরা ১৮ কোটি জনগণ খেতে পারলে তাদেরও খাবার দিতে পারবো।মানবিকতার চাইতেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই মূলত এখানে মূখ্য হয়ে উঠেছিল।
প্রধানমন্ত্রী দেশীয় বিভিন্ন মহলের বাহবা পেতে লাগলেন।আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রশংসা ও বহু ত্রাণ সাহায্য আসতে লাগলো।শুরু হলো লাখ লাখ রোহিঙ্গার বিনা বাঁধায় অনুপ্রবেশ। প্রকৃতি বিনষ্ট করে তাদের আবাস নির্মাণ করা হলো, বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের দান-অনুদান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসতে শুরু হলো।
এভাবে বেশ কিছু দিন ভালোই চলছিল।এক সময় থেমে গেল সাহায্য সহযোগিতা। রোহিঙ্গারা মাদক বিক্রি সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে গেলেন। মাঝখানে নানারকম ইস্যু নিয়ে করোনা মহামারি চলাকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করেই রোহিঙ্গারা বিশাল সমাবেশ করে ফেললেন।
সরকার তাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাস নির্মাণ করে দিলেন।এখন তারা ৫০০০ টাকা করে মাসিক ভাতার দাবী তুলে বসলো। আবার শুরু হলো আমাদের সমালোচনা, আমরা এখন সার্বভৌমত্বের বিষয় বুঝি। রোহিঙ্গা আশ্রয়ের সুদূর প্রসারী ক্ষতিকর দিকগুলো বিশ্লেষণ করতে পারি, সরকারকে এক চেটিয়া দোষ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আবার কাঁপাতে শুরু করেছি।
অথচ রোহিঙ্গা ইস্যুর জন্য আমাদের সস্তা আবেগ,সরকারী দল এবং বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক স্ট্যা ন্ডবাজি,হেফাজতের অতি উৎসাহি অবস্থান দায়ী।
যাহোক সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য মিয়ানমারকে আহবান জানানো সহ কূটনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘ অধিবেশন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্মেলনে এ ব্যপারে বিশ্ব নেতাদের সহায়তা চেয়েছেন। কতটুকু সফল হবেন জানিনা। তবে আমরা চাই রোহিঙ্গা ইস্যুর একটি সুষ্ঠু সমাধান হোক। রোহিঙ্গারা ফিরে যাক নিজ দেশে। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক যেহেতু সরকার তাই রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য সরকারকে দোষারোপ করতেই পারি কিন্তু রাষ্ট্রের মালিক আমরা জনগণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের জন্য সরকারকে যে চাপ সৃষ্টি করেছিলাম তা একেবারে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না।